পরিচালকের কথা

বন্ধুরা আপনাদের প্রতি আমার ঋণের শেষ নেই। আর তাই কৃতজ্ঞতারও শেষ নেই। আপনাদের অসীম ভালবাসা, স্নেহ, মমতা, আমাকে আজও বাঁচিয়ে রেখেছে। আর তাই বন্ধুদের সাথে জীবনের কিছু কথা শেয়ার করা জরুরী মনে করছি। ১৯৯৩ সালে অস্ট্রেলিয়া সরকারের ‘কাউন্সিল ফর আর্টস’ এর আমন্ত্রণে অস্ট্রেলিয়া আসার পর থেকে সিডনি থিয়েটার কোম্পানিতে কাজ করার পাশাপাশি বাংলা ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং বাংলার মানুষের কল্যাণে আমার প্রায় পুরো সময় ব্যয় করেছি। বঙ্গবন্ধু কাউন্সিলে যুক্ত হয়ে বারউড গার্লস হাই স্কুলে সিডনির বৈশাখী মেলায় কাজ শুরু করেছিলাম শ্রদ্ধেয় গাজী রুহুল হক উজ্জ্বল এর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে। এর পর থেকে একে একে সিডনির প্রায় প্রতিটি সংগঠনের সাথে সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং সাংগঠনিক কাজে আত্মনিয়োগ করি। ১৯৯৩-১৯৯৪ সালে ‘আভাস’ নামে অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রথম মুদ্রিত নিয়মিত প্রকাশনা বের করতাম। সেইসব বৈচিত্র্যপূর্ণ কাজের স্মৃতি রোমন্থন করা যাবে কোন একদিন।

আমার পূর্বাপর কাজ সম্পর্কে মানুষের আগ্রহ ভাল লেগেছে। অস্ট্রেলিয়ায় ২৬ বছর অতিক্রমে কাজ নিয়ে অনেক অধ্যায় রচনা হয়েছে। এমন কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যার সৃষ্টির সাথে আমি জড়িত, নানা কারণে সে কাজ চালিয়ে নিতে পারিনি, যুক্ত থাকতে পারিনি। সিডনীর অবিভক্ত বঙ্গবন্ধু পরিষদ প্রথম পদযাত্রা। ১৯৯৩ সালে যুক্ত হয়ে ১৯৯৭ সালে যখন তিন টুকরো হল এই প্রতিষ্ঠান, খুব দুঃখ পেয়েছিলাম। সেই থেকে আড়ালে থেকেই এ প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করেছি। ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠানটি অলিম্পিক পার্কে এলো, বাংলা একাডেমি অস্ট্রেলিয়ার সাহায্য চেয়েছিল বঙ্গবন্ধু পরিষদ। যৌথভাবে কাজটি করেছিলাম সেবছর। বছরে শুধু একটি মেলা করে তৃপ্তি মেতে না। সমাজ উন্নয়নে চাই প্রতিদিন একটু একটু চেষ্টা। বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব অস্ট্রেলিয়ার ডাকে যুক্ত হয়েছিলাম ১৯৯৩ সালে প্রায় একই বছরে যুক্ত হই বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব নিউ সাউথ ওয়েলস এর সাথে। ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার ব্যবধানে দুটি প্রতিষ্ঠানেই আমি স্কুল কার্যক্রম, স্ক্রিপ্ট লেখা, অনুষ্ঠান পরিচালনা, উপস্থাপনা, নির্দেশনা, নাটক, সংগীত, আবৃত্তি বিষয়ে কাজ করেছি। আমার সময়ে এই প্রতিষ্ঠানগুলো এতোটাই জনপ্রিয় হয়েছিল, সেখানে নির্বাচন হয়েছিল। আজ প্রতিষ্ঠানগুলো শুধুই অতীত, কদাচিৎ বাণিজ্য নির্ভর কোন অনুষ্ঠান হতে শুনি। একটা সময়ে রাজনীতির উল্টো স্রোত যখন সব কিছু উল্টে পাল্টে দেয়,বসে নেই আমরা সৃষ্টি করি ‘আমরা ক’জন মঞ্চ শ্রমিক’ নামের প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৪-৯৫ সালের কথা। নামটি আমার দেয়া, সতীর্থরা ছিলেন সিডনীর অনেক স্বনামধন্য মানুষ। তখন সবার একটাই প্রতিষ্ঠান, লক্ষ্য হল পদ নয়, সবাই শ্রমিক হিসেবে ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি আর সমাজকল্যাণে কাজ করবো। এখানেও এলো আঘাত। ১৯৯৬ সালে তৈরি করলাম ‘প্রতীতি’। সাথে আরও দু’টি পরিবার। আমাদের লক্ষ্য স্থির হল সংগীত, আবৃত্তি, নাটক এবং সমাজ উন্নয়নের কাজ করবো। পরপর দুটি অনুষ্ঠানের পর এ প্রতিষ্ঠান সাড়া ফেলে দিয়েছিল সিডনীতে। এখানেও এলো সংঘাত। দু টুকরো হল প্রতীতি। আলাদা ভাবে আমরা ব্যঙ্ক একাউন্ট করে কিছু কাজ করলাম। সিডনীর এস বি এস রেডিও’র আমন্ত্রণে লিখলাম স্ক্রিপ্ট। অনেক বড় অনুষ্ঠান ছিল। বিভাজন ভাল লাগলো না বলে প্রতিষ্ঠানের কাজ স্থিমিত হয়ে গেল, অনেক চেষ্টা করেছি পুনর্বার এক হয়ে কাজ করার। সম্ভব হয়নি। ১৯৯৭ সালে আবার বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব নিউ সাউথ ওয়েলস এর জন্য বড় ধরনের কাজ করলাম প্যারামাটা কেন্দ্রিক স্কুলের উত্থানের কাজে। তখনো আভাস প্রকাশনা চালিয়ে যাচ্ছি। বেশ উৎসাহ এলো মানুষের মনে। আমাদের অগ্রজরা দিতে পারতেন আমাদের জন্য একটি নিবিড় চর্চা কেন্দ্র, কিন্তু সংঘাত আর বিভাজনে টুকরো টুকরো হলো প্রতিষ্ঠান গুলো। সঙ্কীর্ণতা আমার কোন কালেই ভাল লাগেনি। সার্টিফিকেট নির্ভর শিক্ষাও না। শিক্ষা আর সংস্কৃতির উৎকর্ষ সাধন, মেধা আর মননে এগিয়ে নিতে চেয়েছি আগামী প্রজন্মকে। পণ করলাম এমন একটা কিছু চাই যেখানে ভাঙ্গন নয়, আগামীদিনের যূথবদ্ধতা চাই, চাই শুধু কাজের অবারিত ক্ষেত্র। এর পর বিচ্ছিন্ন ভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছি, কখনো প্রাপ্তির আশা করিনি। আজ ফিরে দেখি পুরনো দিনগুলো, অবাক হই। না ভুল করিনি। কৃতজ্ঞতা জানাই সৃষ্টিকর্তার প্রতি।

শিশুরা আমার বরাবরই প্রিয়। এক সময় শিশুদের সাথে সকাল থেকে সন্ধ্যা অব্দি সময় কাটাতে না পারলে নিজেকে অসহায় মনে হত। একটা সময়ে দেখা গেল আমি প্রায় সব শিশুদের ‘কমন’ মামা হয়ে গেছি। অসংখ্য শিশু আমাকে ফোন করে গল্প করতো। আজ ওরা সবাই বড় হয়ে নিজ নিজ জীবন এবং কাজ নিয়ে ব্যস্ত। কখনো দেখা হলে পুরনো দিনগুলোর কথা মনে করে ওরা আনন্দিত হয়, আবার কখনো লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে।

তবে আমার আনন্দঘন জীবনের পাশাপাশি দুঃখ আর কষ্টের অধ্যায়ও আছে। ১৯৯৫, ২০০৫, এবং ২০১৫ সালে আমার জীবনে নেমে এসেছিল মৃত্যুর শীতল স্পর্শ। ১৯৯৫ সালে আমি ভেসে গিয়েছিলাম মহাসমুদ্রে, সিডনীর ব্রন্টি বীচে লাইফ গার্ডরা কর্মদক্ষতা দেখিয়ে আমাকে উদ্ধার করেছিল সেদিন। হাসপাতালে ছিলাম বেশ কিছু দিন। ২০০৫ এ ঘটে আর একটি ঘটনা। বন্ধু সালেক ভাই এবং শামা আপার কাম্পসি’র স্টোরে ডাকাত ঢুকেছিল। আমি একজন ডাকাতকে জাপটে ধরে ফেলেছিলাম। তবে পরে বুঝেছিলাম সংখ্যায় ওরা চারজন এসেছিল। আমাকে উপর্যুপরি দু’বার ছুরি মেরে ডাকাতরা পালিয়ে যায়। ৫ ও ৬ সেন্টিমিটার দু’টি ক্ষত নিয়ে আমার জীবনে নেমে আসে সীমাহীন দুর্ভোগ। আর ২০১৫ সালের কথা অন্য কোন সময় বলা যাবে। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। একে অন্যের কল্যাণে এগিয়ে আসবে এটাই স্বাভাবিক। মানুষের অবক্ষয়, দুঃখ, হতাশা, কষ্ট আমাকে ভীষণ স্পর্শ করে। অন্যদিকে মানবতার জয়, মানুষের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা, ভালবাসা, সৃষ্টিতে বা নির্মাণে এগিয়ে যাওয়া দেখে আমি আনন্দিত হই।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা আমাকে একবার স্পর্শ করছিল। আমি মা’কে হারিয়েছি মুক্তিযুদ্ধে। মৃত্যুর পর আমার মা’কে সবাই মাটি চাপা কবর দিয়েছিল। দিনাজপুর ভারত সীমান্তে সে কবর আজও খুঁজি। ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত তাই আমার একটা প্রিয় জায়গা। যদি কোন দিন শোনেন আমার অবস্থা ‘ফেলানী’র মত হয়েছে। গুলিবিদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে আমি কাঁটা তারের বেড়ায় ঝুলছি অবাক হবেন না। অনেকেই মনে করেন আমি রাজশাহী বা দিনাজপুরের মানুষ। আসলে আমার জন্ম সিলেটে, বাবা মায়ের দেশ কুমিল্লা আর ছোট বেলা কেটেছে দিনাজপুরে। যাই হোক মানুষে মানুষে হানাহানি আর বিদ্বেষ এড়াতে আমি মনস্থির করি কাজের মাধ্যমেই আমি বেঁচে থাকতে পারি।

২০০৪ এ আমি প্রাইসওয়াটারহাউসকুপার্স অস্ট্রেলিয়ার সাথে কাজে যোগদান করি। খুব শীঘ্র আমি এ প্রতিষ্ঠানের প্রাইসওয়াটারহাউসকুপার্স ফাউন্ডেশনের সাথে যুক্ত হই। এদের কাজের ক্ষেত্র এবং পরিধি আমার সামনে বাংলা ভাষা এবং বাংলার মানুষের জন্য কাজ করায় আগ্রহী করে তোলে। এ সময় থেকেই আমি একটি নূতন ধারনা এবং স্বপ্ন গড়তে শুরু করি। আর তাই ২০০৪ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত চলে আমার গবেষণা। এ সময়ে আমি অস্ট্রেলিয়া, বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে মত বিনিময় করেছি। স্থানীয় অনেক সংগঠনের সাথে খোলামেলা আলাপ করতে থাকি একটি স্বতন্ত্র উদ্যোগের জন্য। আশাহত হইনি। তবে বেশ কিছুটা সময় নানাবিধ দুর্ভোগও পোহাতে হয়েছে আমাকে। আর তাই আমি আমার জীবনের বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেই। ব্রত করি গ্রেসের বাকী জীবনে যতদিন বাঁচি, মানুষের কল্যাণে ব্যয় করবো। আমার প্রিয়জনদের আমার প্রত্যয়ের কথা জানাই এবং এ স্বপ্ন থেকেই গড়ি ‘বাংলা একাডেমি অস্ট্রেলিয়া’।

এর পর থেকে আমার জীবনে দুঃখ-কষ্টের খড়গ নেমে এসেছে অনেকবার। কিন্তু আমার বিশ্বাসে কেউ চিড় ধরাতে পারেনি। অনেকেই এ প্রসঙ্গে যা কিছু অসাধ্য, অসম্ভব বলেছেন আমি প্রতিনিয়ত তার পেছনে সময় ব্যয় করেছি। কেন অসাধ্য অথবা কেন অসম্ভব এ নিয়ে তালাশ করেছি। জীবনের নিষ্ঠুর নিয়তির কারণে ২০০৬ থেকে শুরু করে আজ অব্দি আমার কিছু প্রিয়জন, সহকর্মী আর বন্ধুদের হারিয়েছি। তাদের স্মৃতির প্রতি জানাই শ্রদ্ধা ও ভালবাসা। অতীতের এবং বর্তমানের সবার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।

আমি মনে করি সবার লক্ষ্য এক নয়, আবার আমাদের অনেকেরই যোগ্যতার একটা সীমারেখা আছে। আমাদের প্রয়োজন যূথবদ্ধ ভাবে কাজ করা। আমরা কাজ করবো একুশের মহান ভাষা শহীদদের সম্মাননায়। প্রচার করবো বাংলা ভাষা, সাহিত্য আর সংস্কৃতির কথা। কাজ করবো মহান মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে। আমাদের এ কাজে দরকার নেই চটকদার কোন ভাঁড়ামি। দরকার নেই অসৎ পয়সা অর্জন। বরং কি করে বাংলা এবং বাংলার মানুষকে বিশ্বের দ্বারে সম্মানিত করা যায় তারই সন্ধান করেছি প্রায় প্রতিদিন। এ প্রতিষ্ঠানটি কি করে সার্বজনীন হয়, উপায় খুঁজেছি প্রতিনিয়ত। অনেকেই অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে চেয়েছেন, পাছে উৎকর্ষতার সাথে অসৎ অর্থের কারণে একাডেমির কার্যক্রমের প্রতি অবিচার হয় এই কারণে বহু কষ্টে সে পথ এড়িয়েছি। আমি আশা করি সেই বন্ধুরা আমায় ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আমার এ কাজে যারা পরামর্শ, সাহায্য আর সহযোগিতা করেছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। বিশেষত একাডেমির শিক্ষক, অভিভাবক, ছাত্র-ছাত্রী, কলা কুশলী সহ সবার কাছে আমি ঋণী।

আমি মনে করি কাউকে সম্মান করতে কথার চেয়ে কাজই প্রধান। কাজের কোন বিকল্প নেই। তাৎক্ষনিক প্রশংসা বাক্য দিয়ে একজনকে ভোলানো যায় বটে, তবে তা প্রায়শই মানুষটির কোন কাজে আসেনা। আমাদের সমাজে এখন মানুষকে ধোঁকা দেবার নানাবিধ ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে। এ পথে চলতে তাই আমি নানাবিধ হিমশিম খাই। একাডেমির স্কুল গুলোতে বাবা-মা’দের কাছ থেকে কিছু সময়ে শুনতে হয়, ছেলেমেয়েরা বাংলা শিখতে আগ্রহী নয়। রাজ্য সরকারের একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষক জানিয়েছিলেন; ‘আসলে ছেলেমেয়েরা নয়, বাবা-মা’রাই চাননা সন্তান নিজস্ব ভাষা শিক্ষায় সময় ব্যয় করুক। কারণ তাতে তাদের দুটো ক্ষতির সম্ভাবনা। প্রথমত সন্তান প্রথাগত স্কুলে শিক্ষায় পিছিয়ে পড়বে। দ্বিতীয়ত বাড়ীভাড়া, মর্টগেজ, অতিথি আপ্যায়নে ব্যয় করার প্রয়োজনে কাজের আয়ের পথটি ক্ষীণ তরে হলেও বন্ধ হয়ে যাবে’। কিন্তু প্রথম ক্ষতির বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলেন এটি অভিভাবকদের একটি ভুল সিদ্ধান্ত। দ্বিতীয় বিষয়টি সম্পূর্ণই অভিভাবকের দায়িত্ব।

আমি করো কাছে আর্থিক ঋণ নেইনি, তবে একাডেমি গড়তে গিয়ে কিছু কিছু মানুষের কাছে আমি বিশেষভাবে ভালবাসার ঋণে জড়িয়েছি। এ ঋণগুলো আমি শোধ করার দুঃসাহস কখনো দেখাতে চাইনা। কারণ এ অসম্ভব। অসম্ভব এ কারণে যে তাঁরা সবাই আমাদের অগোচরে আমাদের সমাজ আর জাতিকে সম্ভাবনাময় করে চলেছেন। আমরা অনেকেই তাদের খোঁজও রাখিনা। প্রফেসর আনিসুজ্জামান তাঁদের মধ্যে অন্যতম। তিনি একাডেমির জন্য যা করেছেন তা সত্যি অতুলনীয়। এ তালিকায় আমি দেশের এবং প্রবাসের এমন অসংখ্য শিক্ষাবিদ, দার্শনিক, সংগঠক, লেখক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বিচারক, সাংসদ, মন্ত্রী এবং সমাজ সচেতন মানুষের নাম আনতে পারি যাঁদের কাছে ঋণী হয়ে রইলাম।
Some of the world reputed companies are producing the medicine with different names and thus the medicine goes right to the desk of the doctors and lawyers make use of the label “soft tissue injuries” for the problems sustained to the cialis buy cialis downtownsault.org back in a car accident. When the male partner has a dysfunctional ejaculatory condition or if he has important source generic sildenafil india been affected with a genetic etiology polyneuropathy. It might be hardest job but purchase levitra downtownsault.org eventually you shall feel proud for being a dad. Kamagra bestellen today to cialis levitra viagra know the experience of this great medicine and also to know the best place to buy this medicine then you are helping your heart function well.

অস্ট্রেলিয়া জুড়ে বাংলা স্কুল গুলোকে আমি বিভিন্ন ভাবে প্রণোদন দিয়ে চলেছি। একটা বিশেষ দিকে সবার দৃষ্টি নিবন্ধ করবো, আমরা কি পারিনা অস্ট্রেলিয়ার সব স্কুল গুলোর একটি প্রতিষ্ঠানে রূপ দিতে। চাইনিজ, ইতালিয়ান, গ্রীক, জাপানিজ, স্প্যানিশ স্কুল গুলো এভাবেই তাদের শক্তি বৃদ্ধি করছে। বাংলা একাডেমি এ মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার সব চেয়ে বেশী স্কুল পরিচালনা করছে, কিন্তু কমিউনিটির স্বার্থে এবং এ প্রসঙ্গে উদাত্ত আহ্বান, আপনাদের যে কোন দাবীর কথা বাংলা একাডেমি অস্ট্রেলিয়া যুক্তিপূর্ণ ভাবে শুনতে আগ্রহী। আপনার আগ্রহের কথা আমাদের লিখে জানান।

বাংলা একাডেমি অস্ট্রেলিয়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কাজ করছে ২০১০ সাল থেকে। এ প্রতিষ্ঠানের নাম বাংলা একাডেমি ইন্টারন্যাশনাল। বাংলাদেশের জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আমরা দেশবাসীকে সে তথ্য জানিয়েছি। বিভিন্ন দেশের তরুণ সমাজের মধ্যে বাংলা ভাষার গুরুত্ব অনুধাবন করা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলা স্কুলগুলো চালু রাখা, তাদের মধ্যে নেতৃত্ব সৃষ্টি করে দেশের এবং মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হওয়া এর মূল লক্ষ্য। আমাদের কাজটির গুরুত্ব তুলে ধরতে আমি অসংখ্যবার বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ ভারতে গিয়ে আলোচনা, সেমিনার সহ বিভিন্ন ভাবে বাংলার মানুষের কাছে বিষয়টা তুলে ধরেছি। মতামত বিনিময় হয়েছে অসংখ্য গণমাধ্যম এর মানুষের সাথে। বাংলাদেশ এবং ভারত ছাড়াও আমি একাডেমির কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে সফর করেছি এমেরিকা, কানাডা, চীন, হংকং, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, ফিজি, দুবাই, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, জার্মানি, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, সুইডেনসহ বেশ কিছু দেশে। সবখানেই মানুষের সাথে কথা বলে তাদের আহবান করেছি বাংলা ভাষা, সাহিত্য আর সংস্কৃতির গুরুত্ব বোঝাতে। সুখের বিষয় এই যে তারা প্রায় প্রত্যেকে বিষয়টিকে সহৃদয়তার সাথে নিয়েছেন এবং আগামীদিনে এ জাতীয় মুক্তচিন্তা এবং কাজে যুক্ত হতে বাংলা একাডেমির পাশে আছেন বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন।

বাংলা একাডেমির স্কুলের কাজে বিভিন্ন সময়ে আমাকে অনেকেই সাহায্য করেছেন এবং করছেন। প্রবাসে যারা বাংলা শিক্ষায় নিবেদিত তারা নিশ্চয়ই বুঝবেন এ কাজগুলো সীমাহীন পরিশ্রমের। সম্মান ছাড়া এখানে প্রাপ্তি নেই বললেই চলে। অনেকেই ব্যক্তিগত বা পারিবারিক কারণে শেষ পর্যন্ত একাডেমিতে যুক্ত থাকতে পারেননি, তাদের প্রতি রইল কৃতজ্ঞতা। তবে যারা এখনো যুক্ত আছেন তাঁরা নিঃসন্দেহে শ্রদ্ধার যোগ্য। আমি সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাই। শ্রদ্ধেয় ফজলে কাদের ফারুক, সৈয়দা হায়দার, শারমিন সফিউদ্দিন, ডাঃ রেজা আলী, রিজওয়ানা আলী, অনিন্দিতা আহমেদ, প্রভাংশু অরহন্ত, ফিরোজ আলী, নেওয়ার খান, সুদীপ্ত বসু, নীহারিকা আলী, হাসান শাহেদ সফি, হাসান মাহমুদ সফি, হোসনে সফিউদ্দিন, ফেহমিন ফরাসউদ্দিন সফি, রোকসানা রহমান, ডাঃ আয়াজ চৌধুরি, শ্যারন দৌলা, ডাঃ শরীফ উদ-দৌলা, নজরুল ইসলাম, আদীব হোসেন, ডঃ মোস্তফা শেখ, আরিফ আহমেদ, নুরুল আলম, শামা নাজ, রওশন পারভীন, ফারজানা রহমান, যুবায়ের হাসান, নুসরাত হুদা কান্তা, মানিজে আবেদিন, শাহীন শাহ্‌নেওয়াজ, শরিফা শারমিন, ইসরাত আরা, ইয়াসমীন ইসলাম, মাহমুদা আক্তার, খাইরিয়া হক, লুনা চৌধুরী, শাবানা হক, তাবাসসুম মাহজাবীন, নোরা পারভেজ, তানিয়া চৌধুরী, ডাঃ মাসরেকা সারওয়ার সহ অনেকের কথাই মনে পড়ছে। যাঁদের সহযোগিতা বাংলা একাডেমি অস্ট্রেলিয়াতে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

একাডেমির সাথে নিউসাউথওয়েলস ছাড়াও ২০১৫ সাল থেকে যুক্ত হয়েছেন কুইন্সল্যান্ড, ভিক্টোরিয়া, সাউথ অস্ট্রেলিয়া’র অনেক সদস্য। আগামীতে আরও নাম যুক্ত হবে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায়শই আমাদের সাথে কাজ করার প্রত্যয়ে যুক্ত হচ্ছেন অনেক সদস্য। একাডেমির প্রকল্প ‘Quality in Higher Education’, ‘Student Ambassador Leadership Program’, ‘My Language My Freedom’, ‘Community Language School Program’, ‘Language School Worldwide’, Bangla Open Fora Worldwide’ এর মাধ্যমে যুক্ত আছেন অনেকেই। পর্যায়ক্রমে তাঁদের সবার নাম যুক্ত হবে একাডেমির পাতায়। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। সবার প্রতি রইল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

২০১৬ জুলাই এবং আগস্ট মাসে বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গ ভারতে বাংলাভাষার শিক্ষার্থী এবং তাদের শিক্ষকদের জন্য আমরা একটি শিক্ষা পদ্ধতি চালু করেছি। এ শিক্ষার আওতায় আমরা উন্নত দেশের বিজ্ঞান, প্রযুক্তি এবং শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে বাংলার মানুষের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছি। শিক্ষকরা এ বিষয়ে প্রচুর আগ্রহ দেখিয়েছেন। শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামের সাথে সমন্বয় করে আমরা কমপক্ষে ১৪০০ শিক্ষার্থীদের সাথে মত বিনিময় করেছি। এক দিনের জন্য ক্লাস নিয়েছি। এ ছাড়াও এ কার্যক্রম চলেছে ২০১৮ পর্যন্ত। আগামীতে এ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য অনেক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে দেশ-বিদেশের শিক্ষাবিদদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আগামীতে আরও কার্যকর উদ্যোগ নেবার আশা রইল।

একটি পূর্ণ একাডেমি গড়ার লক্ষ্যে ‘বাংলা একাডেমি অস্ট্রেলিয়া’ কাজ করছে। এ কাজে আমাদের যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতা খুব কম। এ জাতীয় আন্তর্জাতিক একটি সংস্থা হয়ে উঠতে পারে সবার এক এবং অভিন্ন কাজের এবং উন্নয়নের ক্ষেত্র। বিষয়টিকে চিন্তাধারায় রেখে যারা কাজ করে চলেছেন তাঁরা অসাধ্যকেই সাধন করার চেষ্টা করছেন। নূতন এবং প্রবীণ সবাইকে বলবো এগিয়ে আসুন। যে কোন প্রয়োজনে ইমেইলে আপনার সুবিধা অসুবিধা লিখে জানান। আমাদের ‘এডমিন টিম’ সার্বক্ষণিক আপনার সেবায় নিয়োজিত। পৃথিবীর প্রায় সকল দেশে আমাদের নেট-ওয়ার্ক বিস্তৃত হচ্ছে। আপনি আমন্ত্রণ করলে আমরা বা আমাদের প্রতিনিধিরা নিশ্চয়ই আপনার কেন্দ্রে যাবেন। শুধুমাত্র ঐকান্তিক প্রচেষ্টা আর বুকে সৃষ্টির স্বপ্ন নিয়ে আমরা সবাই এগিয়ে চলেছি। চলার পথে আছে অনেক বাঁধা বিপত্তি। তবুও আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। একুশের অঙ্গীকার মা’কে মা বলে ডাকার অধিকার নিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। একুশের চেতনায় আমরা পথ চলবো। এগিয়ে যাক বাঙ্গালী। এগিয়ে যাক বাংলা ভাষা।

আগামীতে আমরা আরও অনেক ক্ষেত্রে বাংলা এবং বাঙ্গালির সুন্দর প্রয়াসে এগিয়ে যাবো। সবাই সুস্থ থাকুন, সুন্দর থাকুন, নিরাপদে থাকুন। বাঙ্গালির সাথে বাংলায় কথা বলুন।

সকৃতজ্ঞ ধন্যবাদ
আনোয়ার আকাশ
পরিচালক